প্রতিনিধি সিরিজ: গেম অব ড্রোনস


গেম অব ড্রোনস (প্রতিনিধি সিরিজ এর ৩য় পর্ব)

‘বাতিটা নিভিয়ে দাওতো আনেস।’ হাসিহাসি মুখ করে বললেন দিকপাল সাহেব। আজ তিরিশ বছর পর বউয়ের কোলে ঘেটি দিয়া মনের সুখে ঘুমাবেন তিনি। শুধু বউয়ের কোলো ঘুমানো ছাড়া তিরিশ বছরে কতকিছুই করে ফেলেছেন! সায়েন্স ফিকশান সব উল্টিয়ে একাকার করেছেন। ত্রিশটি ড্রোন বানিয়ে বিভিন্ন গ্রহে পাঠিয়েছেন। ছড়া-কবিতার জগতেও নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে রেখেছেন। গতমাসে ‘মুতিয়া-এলো’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো রোবটদের জন্য লেখা তাঁর কষ্টের কবিতা ‘সিংসাং’। ছাপিয়ে ছিলেন বন্ধুবৎসল গনিসুল হক। সমগ্র প্লানেটে সাড়া পরে গিয়েছিলো! প্রক্সিমা সেন্টাউরি থেকে অনেকেই ফোন করে কেঁদেছেনও। শয়তানের গ্রহ Eviler-B323923 থেকে তাকে মহাকবি হোমারের মর্যাদা দেয়া হয়েছে! ভাবতেই কেমন একটা কবি কবি শিহরণ হচ্ছে দিকপাল সাহেবের।

নাহ আর এসব শিহরণ-ফিহরণে কাজ নেই, বরংচ হেদিয়ে পরে মাকছুদার কোলে একটা ঘুম দিলে লাভ হবে। মনেমনে বলেন দিকপাল। আনেস শুয়োরটা বাতি নিভাচ্ছে না।

‘আনেস….. আনেস…..আরে এই আনেইচ্চার বাচ্চা!” তিনবারেও সাড়া নেই আনেসের।

‘থাপ্রাতে হবে নিকি শূয়োর?’ খেকিয়ে ওঠে দিকপাল সাহেব!

‘তুই কী শুনিসনে জানোয়ার?’ রাগে

ইলেকট্রিক শূয়োরের মতো ঘোৎঘোৎ করে উঠলেন দিকপাল সাহেব। রাগে তাঁর শরীরের পশম দাঁড়া হয়ে গেলো, দাঁড়িয়ে গেলো ছত্রিশ বচ্ছরে না ছাটা মোসও! এমন ইলেকট্রিক শূয়োরের মতো ঘোৎ করে ডাক শুনে ভয়ে কলজে মুখে চলে আসে কামের ছেমড়া আনেসের! তড়িঘড়ি করে দৌঁড়ে এসে লাইটটা নিভিয়ে অন্ধকারে নিজের শোবার ঘরে খিচ্চা দৌঁড় মারে আনেস!

‘হা হা হা! ভয় পেয়েছে! হা হা হা! সাগোল কোতাকার! হা হা হা!’ হাসতে হাসতে বউয়ের কোলে হেদিয়ে পরে সাথেসাথেই নসিকায় টান মারেন দিকপাল। বউ বিরক্ত হয়, কেমন হুলো বিলাইর মতো ঘুম কাতুরে লোকটা ইস! মাকছুদা বেগমের হাত নিসপিস করতে লাগলো। কবে সেই কাউকে থাপ্রিয়েছে মনেও নেই! কেমন হয় যদি স্বামীকে ঠাস করে একটা থাপড়া দেয়া যায়? যদি টের পায়? তো খাইছে! আবার ভাবে, নাহ্ দিয়েই ফেলি। যেই ঘুম কাতুরে কখনোই টের পাবেনা। টের পেলে আমিও ঘুমের ভান ধরে বলবো, ঘুমের মধ্যে থাপ্রা পরছে। ভাবতে ভাবতে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিকপালের গালে মেরে দিকপালের ঘেটি কোল থেকে সড়িয়ে পাশের বালিশে ভোঁসভোঁস করে ঘুমিয়ে গেলেন মাকছুদা বেগম। দিকপাল গণ্ডারের মতো ভোসভোস করে ঘুমুচ্ছে। কিছুই টের পেলোনা!

.

মাকছুদা বেগমের চোখে ঘুম লেগে এসেছে এরমধ্যেই বুনো শূয়োরের মতো কাইকাই করে শব্দ করে উঠলেন দিকপাল সাহেব! লাফ দিয়ে বসলেন মাকছুদা বেগম। দিকপাল ঘুমের মধ্যে মহিষের মতো গোঙাচ্ছে! মনেহয় স্বপ্ন দেখছে, মনেমনে বললেন মাকছুদা। না শুয়ে পরি। তিনি বিছানায় পিঠ লাগাবেন এমন সময় ‘পাইছি! পাইছি!’ বলে চিৎকার মেরে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলেন দিকপাল সাহেব। ভয় পেয়ে গেলেন মাকছুদা বেগম। ভয় সামলিয়ে স্বামীর দিকে বাজপাখির মতো তাকালেন,

‘কী পাইছ?’

‘স্পয়লার!’

‘কিসের?’

‘গেম অব ড্রোনসের!’

‘মানে?’

‘মানে পরে এসে বলবো। এখন এটার পেটেন্ট লিখিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্পয়লার বলে দিতে হবে। ‘ বিছানা থেকে উঠেপরেন দিকপাল সাহেব। ভার্সিটি মাঠে যেতে হবে। তড়িঘড়ি করে লুঙ্গী ছাড়াই ছোটা শুরু করলেন তিনি।

‘আরে তোমার লুন্গী নিয়া যাও!’ বললেন মাকছুদা বেগম।

‘তুমি আপাতত পিন্দো। আমি পরে এসে পিনবো।’ বলেই খিচ্চা দৌঁড় দিলেন ভার্সিটি মাঠের দিকে । হতভম্ব স্ত্রী নাংগা দৌঁড়ানো স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। লক্ষ্য করলেন, দিকপাল দৌঁড়ানোর সময় দুপাশে পেন্ডুলামের মতো ঝুলছে কিছু একটা। পরনে কোন কাপড় নেই এতে কোন সমস্যা নেই।

যারা পৃথিবীর রহস্য উন্মাচন করেন তারা প্রথমে নিজেদের লজ্জাস্থান উন্মোচন করেন। আর্কিমিডিসের কথা মনে নেই? আর্কিমিডিস কে রাজা একটা মুকুটের সোনা আর খাদের পরিমাণ বের করতে দিয়েছিলো। দ্বায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আর্কিমিডিস বেসিনে নগ্ন গোসল করতে নামলেন। বেসিনে নামার পর কিছুটা জল বাইরে গড়িয়ে পরলে আর্কিমিডিস খুশির ঠ্যালায় নগ্নই রাজসভায় ‘পাইছি! পাইছি’ বলে দৌঁড় দিয়েছিলেন। দিকপাল সাহেব এযুগের ডিজিটাল আর্কিমিডিস এতে কোন সন্দেহ নেই! গর্বে বুকটা দু-তিনবার উঁচু হয়ে ওঠে মাকছুদা বেগমের।

.

দিকপাল সাহেব ভার্সিটির মাঠে এসে যখন পৌঁছলেন তখন সকাল আটটা। ছাত্রীরা কেউকেউ তখন সবে এসেছে ভার্সিটিতে। মাঠের দিকে কোন ভিনগ্রহের প্রাণীর মতো কাউকে দৌঁড়ে আসতে দেখলেন তাঁরা। না ভিনগ্রহের না, বুকে বনমানুষের মতো পশম, নিশ্চই বনমানুষ! তাঁরা ভাবে। আগন্তুক কাছে আসতেই সবাই যেন এলিয়েন দেখার মতো চমকালো! এযে স্যার! প্রিয় স্যারের এদশায় তাঁরা অাশ্চর্য না হয়ে পারলোনা! সবাই স্যারকে ঘিরে দাঁড়ালো। লজ্জাস্থানের মাথায় পারা!

.

সবাই দাঁড়াক তাতে সমস্যা নেই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সমবেত সবাই স্যারে টুনটুনির দিকে তাকিয়ে! স্যার কী নাংগা পাগল হয়ে গেলেন? মনে বল্ল ছাত্রীরা। দিকপাল সাহেব কিছুটা আঁচ করতে পারলেন।

‘প্রিয় ছাত্রীরা তোমরা আমাকে দেখে নিশ্চই চিন্তিত? চিন্তা করোনা, আমি এযুগের আর্কিমিডিস। আমি এসেছি রহস্যের জাল তোমাদের সামনে ফুটো করতে!’ দিকপাল সাহেব বললেন ।

‘কী রহস্য স্যার?’ সমবেত ছাত্রীদের কণ্ঠ।

‘প্রিয় ছাত্রীরা, গেম অব থ্রোনসের স্পয়লার আমি স্বপ্নযোগে পেয়ে গেছি!’

‘সত্যিই স্যার?’

‘হ্যাঁ!’ কী স্যার?’

‘ আসলে ওটা কোন সিংহাসন রহস্য নয়, ওটার মূল রহস্য হচ্ছে একপাল ড্রোন নিয়ে!’

ছাত্রীরা সব অগার মতো তাকিয়ে আছে। দিকপাল সাহেব হাসেন,

‘কী বিশ্বাস হচ্ছেনা?’

‘না স্যার!’ সমবেত ছাত্রীরা বল্ল।

‘তোমরা যারা অবিশ্বাসী: সিংহাসনের মাথার সুঁচালো দাঁড়াগুলো খেয়াল করে দেখেছো কেমন ড্রোনের মতো? আর ওখানে একটা নয়, দুটা নয় কয়েকটা ড্রোন। আর ঐ ড্রোন যে রাজা পাবে সেই হবে সাতটা নয় শুধু পুরো বিশ্বের রাজা! এজন্যই এত হানাহানি, যুদ্ধ সিরিজটায় বুঝলে বাড়া? তাছাড়া ঐযে ডেনিরিস কে দেখো খালি ড্রাগন নিয়ে এখানে সেখানে উড়ছে, ওগুলো কিন্তু আসলে ড্রাগন না ওগুলো আধ্যাত্মিক ড্রোন। ‘

ছাত্রীদের চোখ চকচক করে উঠলো! এতদিন তাঁরা তাহলে বিজ্ঞানই দেখেছে। ভূয়ছূয়া কোন গল্প নয়! গর্বে বুক ফুলে উঠে তাদের। ছাত্রীরা মিলে দিকপাল সাহেবের নমে জয়ধ্বনী দিতে শুরু করলো।

‘স্যার আমার নাসায় খবর দিয়েছি। তাঁরা আপনার এমন ব্রেইন জাদুঘরে রাখবেন বলে জানিয়েছে! বিকেলেই তাঁরা মাঝারি একটা ড্রোনে চড়ে আসবেন বলেছেন আপনাকে সংবর্ধনা দিতে।’ সমবেত ছাত্রীরা বল্ল। দিকপাল সাহেব খুশির ঠ্যালায় হাতপা ছড়িয়ে ক্যাঙারুর মতো দুলতে শুরু করলো।

.

সমবেত ছাত্রীরা দিকপাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে আবার বল্ল,

‘স্যার! ক্যান উই টেক সেলফিস উইথ ইয়্যু?’

‘অপস্! নিশ্চই, শিউর শিউর’

বলতে বলতে ছত্রিশ বছরে নাকাটা তেলমাখা গোঁফে তা দিতে থাকেন দিকপাল সাহেব, নাকের ছিদ্রে তখনো উঁকি দিচ্ছিলো সাইত্রিশ বছরের না কাটা সেই পশম। টুনটুনিটাও সামান্য নড়ে উঠলো!

.

প্রতিনিধি পর্ব ১- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=306839470181499&id=100025663455379

প্রতিনিধি পর্ব ২- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=355097258689053&id=100025663455379 [ আশফাক মাহমুদ ]

Leave a comment